নবীগঞ্জ, ১৫ ফেব্রুয়ারী : নবীগঞ্জে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। অব্যাহত এই বালু উত্তোলনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ। নদ নদী থেকে অপরিকল্পিত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) বলেছে তারা বিষযটি খতিয়ে দেখবেন। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ১১ জন অবৈধ বালু উত্তোলনকারীর বিরুদ্ধে জগন্নাথপুর থানায় মামলা হয়েছে। নবীগঞ্জ থানায় এর আগে মামলা ও জরিমানা হলেও কুশিয়ারা নদীতে বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন।
গত কয়েক বছর ধরে যত্রতত্র বালু উত্তোলনের কারণেই কুশিয়ারা নদীর ভাঙন বন্ধ হয়নি। অভিযোগ আছে একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও স্থানীয়রা বিরোধিতা করলেও তাদের তৎপরতা বন্ধ করা যায়নি। এ কারণে নদীভাঙন রোধে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও কোনো সুফল আসছে না ।
এদিকে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড.ফরিদুর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসন কুশিয়ারা নদীর বালু তোলার কোন অনুমোদন দেয়নি। প্রতিদিনই ২০/২৫টি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। আর বালু উত্তোলনে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করায় প্রতিবছরই নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এমনকি ব্যক্তিস্বার্থে এ বালু উত্তোলনে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। তাই অবৈধ এ বালু উত্তোলন বন্ধে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের নিকট দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি তোলেছেন এলাকাবাসী।
নবীগঞ্জ উপজেলার অন্তর্গত কুশিয়ারা নদীর তীরে এই প্রতিবেদক সরজমিন গেলে ড্রেজার ও লম্বা পাইপ ব্যবহার করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেখা যায়। অভিযান পরিচালনা করলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনকে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে জগন্নাথপুর থানার সীমানা থেকে বালু উত্তোলন করছেন। আবার জগন্নাথপুর প্রশাসন অভিযানে আসলে, তাদেরকে জানানো হয়, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে নবীগঞ্জ সীমানা থেকে বালু তোলা হচ্ছে। অনেকটা শুভংকরের ফাকিঁর মতো। তবে এই অবৈধ বালু জমা রাখা হচ্ছে নবীগঞ্জে। ইতিমধ্যে একাধিকবার জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ হলেও কার্যত কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় দেদারছে উত্তোলন করা হচ্ছে বালু। ফলে কুশিয়ারা নদী ভাঙন আরও তীব্র হচ্ছে। এদিকে জগন্নাথপুর এলাকায় কুশিয়ারা থেকে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে উপসহকারী ভুমি কর্মকর্তা রুহুল আমীন বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার ১১ জন অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে একটি নিয়মিত মামলা নং ১০, তারিখ ১১-০২-২০২৫ইং দায়ের হয়েছে।
দুর্গাপুর এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম মিয়া জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাহায্য সহযোগিতায় মেশিন ও ড্রেজার স্থাপন করে অবাধে এসব বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ৫০ বছর বয়সি শফিক মিয়া জানান, অপরিকল্পিত ভাবে এসব বালু উত্তোলনের ফলে আশেপাশের বাড়িঘর,স্কুল মাদ্রাসা, কৃষি জমি ও বিবিয়ানা পাওয়ার প্লান্ট ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বিভিন্ন নদী থেকে অপরিকল্পিতভাবে, অবাধে ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। আমরা বিষয়টি জেনেছি ফলে অবৈধ বালু উত্তোলন রোধে বেলার বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে, নবীগঞ্জের কুশিয়ারা নদীর বিষয়টি দেখা হচ্ছে। অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়টি বেলার অনুসন্ধানী দল সরেজমিন পরিদর্শন করে ঘটনার ‘সত্যতা খুঁজে পায়’ তখন ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও হবিগঞ্জ বাপার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘অপরিকল্পিত ও অননুমোদিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীগুলোর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে, নদীর দুই পাড় ভেঙে পড়ছে। এতে নদীর পাড় সংলগ্ন কৃষিজমি, বাঁশঝাড়, গাছগাছালি, বসতবাড়ি,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবহারে রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে এবং কালো ধুয়া ও তীব্র শব্দের কারনে বায়ু দূষন হচ্ছে।
একইসঙ্গে তিনি বলেন, বাসাবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষক ও কৃষিজমির ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে তা আদায় করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।
খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোর উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বিদ্যমান খনি ও খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২-সহ বিদ্যমান অন্যান্য আইন অনুযায়ী অনিয়ন্ত্রিত ও অবৈধ বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ।’ আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
পরিবেশ অধিদপ্তর হবিগঞ্জের উপ-পরিচালক আকতারুজ্জামান জানান, তিনি এই বিষয়ে কোন ফাইল পত্র না দেখে বলতে পারবেন না। বালু উত্তোলনে পরিবেশ আইন মেনেই বালু তোলার কথা। কিন্তু ১৭৭টি ফাইল আছে এর মধ্যে কুশিয়ারা নদীর ফাইল আছে কি না জানিনা।
তিনি বলেন, এখানে আমাদের কোনো কাযক্রম নেই। এটি জেলা প্রশাসক ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। কেউ যদি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র চায়, সেক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক আবু সালেহ কাইয়ুম বলেন, বালু তোলার জন্য আমরা একটি এন্টারপ্রাইজকে শুধু অনুমতি দিয়েছি। তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিবেন। তবে বালু উত্তেলনকারীরা জেলা প্রশাসকের কোন অনুমতির কাগজ দেখাতে পারেন নি। নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন কে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan